চাহিদামতো টাকা দিলেই চক্রের সদস্যরা অবৈধভাবে জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট বানিয়ে দেন। তাদের মাধ্যমে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশের নাগরিক বনে গেছে। দাগি আসামিরাও নিজেদের নাম-পরিচয় বদল করে নতুন নতুন অপরাধে জড়াচ্ছে।

দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

সম্প্রতি পৌরসভা মেয়র, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইডি দিয়ে কম্পিউটার অপারেটরদের সহায়তায় অবৈধভাবে জন্মসনদ বানিয়ে দেওয়া একটি চক্র শনাক্তের পর আরো একটি চক্রের সন্ধান পেল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে দুই আনসার সদস্যসহ এই চক্রের ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ডকুমেন্ট ও ডিভাইস। গতকাল সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবির লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম রাজধানীর আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার তিন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ এবং ১০ জন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্য এবং সংগৃহীত ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে গত রবিবার কক্সবাজার, টাঙ্গাইল এবং ঢাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে দুই আনসার সদস্যসহ রোহিঙ্গা ও বাঙালি দালাল চক্রের আট জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত রোহিঙ্গারা হলো উম্মে ছলিমা ছমিরা, মরিজান ও রশিদুল। রোহিঙ্গা দালাল আইয়ুব আলী ও মোস্তাকিম। আনসার সদস্য দুই জন—জামসেদুল ইসলাম ও মো. রায়হান। বাঙালি দালাল রাজু শেখ, শাওন হোসেন নিলয়, ফিরোজ হোসেন, মো. তুষার মিয়া। আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, উত্তরায় কম্পিউটারের দোকান খুলে এসব কাজে লিপ্ত গ্রেফতার অপর দালালরা হলো—মো. শাহজাহান শেখ, মো. শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমেদ হোসেন, মো. মাসুদ আলম, মো. আব্দুল আলিম, মো. মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন, মো. সোহাগ। গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি এনআইডি, পাঁচটি কম্পিউটার, তিনটি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্ট তৈরির সংশ্লিষ্ট শত শত দলিলপত্র জব্দ করা হয়েছে। আসামিরা পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন।

ডিবি প্রধান বলেন, চক্রটি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদের প্রত্যেকের জন্য এক লাখের বেশি টাকার বিনিময়ে জন্মসনদ, এনআইডি ও পাসপোর্ট বানিয়ে দিত। একটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় নিয়ে আসত। আরেকটি দল তাদের জন্য জন্মসনদ, এনআইডি বানিয়ে দিতো। সর্বশেষ অন্য দলটি ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া, বায়োমেট্রিক করা ও ছবি তোলার ব্যবস্থা করত। ছয় ঘণ্টার মধ্যে জন্মসনদের জন্য তারা ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা নিত। তিন দিনের মধ্যে এনআইডি করে নেওয়ার জন্য ২৫ হাজার এবং পাসপোর্ট তৈরির জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিত বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *